সুন্দরবনের ভূতের গল্প: হারিয়ে যাওয়া পথ
শীতের এক সকাল। ঢাকা থেকে আসা একটি পরিবার - বাবা আসিফ, মা তানিয়া, এবং তাদের দুই সন্তান রিমি ও রনি - সুন্দরবনে বনভোজনে এসেছে। সকাল থেকেই তারা নৌকা করে বনের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে। সূর্য মাথার উপরে উঠে আসায় তারা একটি ছোট খালের ধারে নেমে পড়ে। সেখানে তারা খাবার খায় এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়।
খাবার খাওয়ার পর রিমি ও রনি বনের ভেতর খেলতে যায়। তারা ছুটোছুটি করতে করতে অনেক দূরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর তারা বুঝতে পারে যে, তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে। তারা চারপাশে তাকায়, কিন্তু কোন চেনা জিনিস দেখতে পায় না। শুধু অজানা গাছপালা আর জীবজন্তুর শব্দ। তারা ভয় পেয়ে যায়।
রিমি ও রনি চিৎকার করে তাদের বাবা-মাকে ডাকে। "আব্বু! আম্মু!" কিন্তু বাবা-মা তাদের কথা শুনতে পায় না। তারা আরও ভয় পেয়ে যায়। তারা বনের ভেতর এলোমেলো ভাবে ঘুরে বেড়াতে থাকে।
সূর্য অস্ত যাচ্ছে। বনের ভেতর আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসছে। রিমি ও রনি খুব ক্লান্ত এবং ভয়াক্রান্ত। হঠাৎ তারা দূরে একটি আলো দেখতে পেয়ে সেদিকে দৌড়ে যায়।
আলো আসছিল একটি পুরোনো পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে। বাড়িটি অনেক পুরোনো এবং জীর্ণ শীর্ণ। বাড়ির চারপাশে ঝোপ ঝাড় জন্মেছে। দরজা-জানালা ভাঙা।
রিমি ও রনি ভয়ে ভয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। বাড়ির ভেতর অন্ধকার এবং ঠান্ডা। একটি অদ্ভুত গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হঠাৎ রিমি ও রনি শুনতে পায় যেন কেউ তাদের নাম ধরে ডাকছে। "রিমি... রনি..." তারা ভয়ে চারপাশে তাকায়। কিন্তু কেউ নেই। শুধু পুরোনো আসবাবপত্রের ছায়া দেয়ালে নাচছে।
রিমি ও রনি একটি কোণে বসে পড়ে। তারা খুব ভয় পাচ্ছে। তারা জানে না এখন তাদের কি করতে হবে। রিমি তার ছোট্ট ভাইকে জড়িয়ে ধরে আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে।
হঠাৎ বাড়ির ভেতর একটি আলো জ্বলে উঠে। আলো আসছে একটি পুরোনো ল্যাম্প থেকে। ল্যাম্পটি নিজে নিজেই জ্বলে উঠেছে!
রিমি ও রনি ভয়ে চিৎকার করে উঠে। তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
রিমি ও রনি আরও ভয় পেয়ে যায়। তারা জানে না এখন তাদের কি হবে।
হঠাৎ বাড়ির ভেতর একটি ছায়ামূর্তি দেখা যায়। ছায়াটি আস্তে আস্তে তাদের দিকে এগিয়ে আসে। রিমি ও রনি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
কিছুক্ষণ পর তারা চোখ খোলে। তারা দেখতে পায় তাদের বাবা-মা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা-মা তাদের জড়িয়ে ধরে।
রিমি ও রনি খুব খুশি হয়। তারা বাবা-মার সাথে বাসায় ফিরে যায়।
পরের দিন সকালে তারা আবার সেই বাড়িটি খুঁজতে যায়। কিন্তু বাড়িটি তারা খুঁজে পায় না। যেন বাড়িটি কখনও ছিলই না।
রিমি ও রনি বুঝতে পারে যে তারা "সুন্দরবনের ভূতের গল্প"-এর একটি অংশ হয়ে গেছে। তারা জানে না সেই রাতে আসলে কি হয়েছিল। কিন্তু তারা চিরকাল সেই রাতের কথা মনে রাখবে।