আঁধারের আহ্বান - The Call of Darkness | প্রথম পর্ব

আঁধারের আহ্বান - The Call of Darkness | প্রথম পর্ব

ঢাকার পুরনো এলাকার একটি সরু গলিতে, কাদামাটির দেওয়াল, টিনের চালা, এমন একতলা বাড়ির মধ্যে কামাল অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। তার শরীর ঘামে ভেজা, চোখ দুটি ভয়ে ও অসহনীয় দুঃখে ভরা। কয়েক মাস ধরে অদ্ভুত এক অসুখে ভুগছিল সে। রাতে ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন, অস্পষ্ট ছায়ার ঝলকানি, আর অদৃশ্য কোনো সত্ত্বার স্পর্শে সে থরথর করে কাঁপত। চিকিৎসকরা ঠিক বুঝতে পারেন না সমস্যাটা কী, শুধু মানসিক চাপের কথা বলছেন। কিন্তু কামাল জানে তার সমস্যা অন্যরকম, অতিলৌকিক কিছু ঢুকে পড়েছে তার মধ্যে।

এক রাতে, অসহ্য যন্ত্রণায় আর চিৎকার করে উঠতে না পেরে কামাল তার বোনকে ডাকে। তার বোন জুলি, ঘরে ঢুকে কান্নাকাটা কামালকে দেখে চমকে উঠে। "কী হলো কামাল? আবার?" জুলি ভয়ে-ভয়ে জিজ্ঞাসা করে।

কামাল কষ্টে মাথা নাড়ে। কথা বলতে পারে না সে, শুধু হাত বাড়িয়ে জুলির হাত ধরে শক্ত করে চেপে ধরে। জুলি তার ভাইয়ের এই অবস্থা আর সহ্য করতে পারে না। সে দৌড়ে গিয়ে বাবা-মাকে ডাকে।

কামালের বাবা-মা ঘরে ঢুকে ছেলের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। কামালের বাবা, আব্দুল, ছেলের কাছে এসে বসে, কোমল স্বরে বলে, "কিছু বলতে পারছিস না কামাল? ছেলে, ঠিক আছিস?"

কামাল শুধু মাথা নাড়ে, তার চোখ দুটিতে সাহায্যের আকুল আকাঙ্ক্ষা ফুটে ওঠে। আব্দুল স্ত্রীকে বলে, "তোরফা, ইমাম সালিমের সাথে যোগাযোগ কর। এই অবস্থায় আর চলতে পারে না।"

তোরফা মাথা নাড়ে। সে জানে ছেলের অসুখটা সাধারণ না, কিন্তু এসব বিষয়ে কথা বলতে কিছুটা দ্বিধাও থাকে তার মনে। তবে ছেলের এই অসহ্য যন্ত্রণা আর না দেখে পারে না সে।

অবশেষে, টেলিফোনে ইমাম সালিমের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ইমাম সালিম শুনে অবাক হয়ে যান। তিনি কামালের পরিবারকে নিশ্চিন্ত করেন এবং আশ্বাস দেন যে, তিনি দ্রুতই তাদের বাড়িতে আসবেন।

এই অসহ্য রাতে, কামালের পরিবার আশার আঁকড়ে ধরে, অপেক্ষায় থাকে ইমাম সালিমের আগমনের।

কামালের দুঃস্বপ্ন:

কামাল রাতে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকলেও তার মন যেন জেগে থাকে। সে নিজেকে দেখে অসম্ভব এক কবরস্থানে, চারপাশে শুধু মৃত মানুষের সমাধি। হঠাৎ, মাটির নিচ থেকে একটা শীতল হাত তার পা ধরে ফেলে। সে চিৎকার করতে চায় কিন্তু কোন শব্দ বের হয় না। সে ছটফট করে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরে। তার চোখের সামনে মাটি ফাটে যায়, আর সে দেখতে পায় এক জীর্ণ, ক্ষয়প্রাপ্ত মুখ, শূন্য চোখ আর ধারালো দাঁত। জীর্ণ গলায় সে ফিসফিস করে, "আমি তোমাকে নিয়ে যাব।" কামাল আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে জেগে ওঠে।

ছায়া:

এই দুঃস্বপ্নের মতোই কামাল রাতে অদ্ভুত ছায়া দেখতে পায়। কখনও ঘরের কোণে, কখনও দরজার ফাঁক দিয়ে ঝলমলে সেই ছায়া। মানুষের আকারের মতো, কিন্তু কোনো মুখ নেই, শুধু দুটো লালচে চোখ। কখনও সেই ছায়া কামালের দিকে এগিয়ে আসে, ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা দেয়, কিন্তু কখনো স্পর্শ করতে পারে না যেন কোনো অদৃশ্য দেয়ালে আটকা পড়ে। কামাল চিৎকার করতে চায় কিন্তু কণ্ঠে কোনো শব্দ আসে না, শুধু অসহায়ের মতো কাপতে থাকে।

এই অসহ্য অভিজ্ঞতাগুলো কামালকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। সে দিনের বেলায়ও ভয় পায়, রাতে আর ঘুমতে পারে না। তার পরিবারও চিন্তায় আর দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটায়। অবশেষে, তারা সিদ্ধান্ত নেয় ইমাম সালিমের সাহায্য নেওয়ার।

এই রাতেও, কামালের বিছানায় অস্বাভাবিক শীতল হাওয়া বয়ে যায়। সে চোখ খুলে দেখে, অস্পষ্ট ছায়াটা আবার তার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কামাল আর সহ্য করতে পারে না। সে চিৎকার করে, "কে তুমি? আমাকে ছেড়ে দাও!" কিন্তু কোনো جواب নেই। হঠাৎ, ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। কামালের মা দরজা খুলে দেখে ইমাম সালিম দাঁড়িয়ে আছেন। এক আশার আলো জাগে কামালের মনে।

Read more

সুন্দরবনের ভূতের গল্প: হারিয়ে যাওয়া পথ

সুন্দরবনের ভূতের গল্প: হারিয়ে যাওয়া পথ

শীতের এক সকাল। ঢাকা থেকে আসা একটি পরিবার - বাবা আসিফ, মা তানিয়া, এবং তাদের দুই সন্তান রিমি ও রনি - সুন্দরবনে বনভোজনে এসেছে। সকাল থেকেই

By কা,আন