অচেনা সুর

অচেনা সুর

শ্রাবণের ঝুম বৃষ্টিতে জলমগ্ন ছিল পুরো এলাকা। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর ব্যাঙের ভ্যাঙানিতে মিশে ছিল একটা বিচিত্র সুর। রাত যত বাড়ছিল, ছোট্ট মিনির কাছে সুরটা ততই স্পষ্ট হচ্ছিল। একটা মিষ্টি, টানা সুর, যেন বাঁশির মতো কিন্তু একটু আলাদা। প্রথমে সে ভেবেছিল বাইরের কোনও ছেলে হয়ত বাঁশি বাজাচ্ছে। কিন্তু, এই ঝড়-বৃষ্টিতে?

মিনি উঠে জানলা দিয়ে তাকালো। রাস্তায় কেউ নেই, ঝড়ে শুধু গাছগুলো দুলছে। আবার বিছানায় এসে কান পাতলো। সুরটা ততক্ষণে অনেক কাছে, যেন বাড়ির ভেতরেই বাজছে! মিনি গা ছমছম করে উঠলো। এমা কি, মা কি নেই? আজ বিকেলেই তো মা বাজারে গেছেন।

মিনি ভয়ে ভয়ে ঘর থেকে বেরলো। বাঁশির সুরটা যেন দোতলা থেকে ভেসে আসছে। এত রাতে, বাবা ঘুম থেকে ওঠেন না। চোরও হতে পারে না, দোতলার জানলা সব বন্ধ। তারপরও, সুরটা মিনিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। সিঁড়িগুলো পেরিয়ে সে দোতলায় উঠলো

দোতলার ঘরটা আবছা অন্ধকার। বহুদিন ব্যবহার হয়নি এটা। কিন্তু ওই, ওই কোণার দিক থেকে সুরটা সবচেয়ে জোরে আসছে। মিনি হামাগুড়ি দিয়ে দেয়াল ধরে এগিয়ে গেল। দেয়ালে ঠান্ডা স্যাঁতসেঁতে ভাব। আর, হঠাৎ...

দেয়ালের ওপর একটা ছায়া। মানুষের মত লম্বা, কিন্তু হাতগুলো মাকড়সার মতো সরু। আর মাথাটা? মাথাটা ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ওখান থেকেই বাঁশির সেই অচেনা সুরটা ভেসে আসছে।

মিনি চিৎকার করতে যাবে, তার আগেই ছায়াটা ঘুরে দাঁড়ালো। দুটো জ্বলজ্বলে লাল চোখ মিনির দিকে তাকিয়ে রইলো.

তা দেখে মিনি তার চোখ বন্ধ করে ফেললো। ভয়ে সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ছায়াটা এগিয়ে আসছে, তার ঠান্ডা নিঃশ্বাস মিনির মুখে এসে লাগছে। মিনি ভাবলো, এটাই শেষ।

হঠাৎ, দরজার দিক থেকে একটা আলো এসে পড়লো। মিনি চোখ খুলে দেখলো, বাবা! ঝড়ের জন্য বাইরে বেরিয়েছিলেন, তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছেন।

ছায়াটা আলো দেখে চমকে গেল। একটা অদ্ভুত চিৎকার করে সে দ্রুত দরজার দিকে ছুটে গেল। বাবা মিনিকে জড়িয়ে ধরে বললেন, "ভয় পেয়ো না, মা।"

মিনি বাবাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। বাবা ঘরটা খুঁজে দেখলেন, কিন্তু কিছুই পেলেন না।

পরের দিন, মিনি স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সব ঘটনা বললো। সবাই ভয় পেয়ে গেল।

কয়েকদিন পর, স্কুলের পাশে একটা পুরোনো বাড়ি ভেঙে ফেলা হলো। শ্রমিকরা ভেতর থেকে একটা অদ্ভুত কঙ্কাল খুঁজে পেল। লম্বা, পাতলা হাত-পা, মাথায় শিং।

মিনি বুঝতে পারলো, ওই রাতে সে যে ছায়াটা দেখেছিল, সেটা ছিল ওই অদ্ভুত প্রাণীরই।

কিন্তু, সেই বাঁশির সুর?

মিনি আর কখনো সেই সুর শুনতে পেল না। কিন্তু, সেই রাতের ভয়াবহ স্মৃতি তার মনে চিরকাল থেকে গেলো।

Read more

রক্তজবা (The Red Hibiscus)

রক্তজবা (The Red Hibiscus)

এক ভুতুড়ে জমিদার বাড়ি, রক্তজবার অভিশাপ, আর রক্তির প্রতিশোধের ভয়ংকর গল্প "রক্তজবা"। বাংলার লোমহর্ষক লোককথার আবহে রচিত এই গল্প আপনাকে নিয়ে যাবে রহস্য আর ভয়ের অন্য এক জগতে।

কা,আন