ভুলের অভিশাপ

একজন যুবতী একটি ভেঙে পড়া ম্যানশনে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হন এবং অজান্তেই তার পূর্বপুরুষের লোভের সাথে জড়িত একটি প্রাচীন অভিশাপকে উন্মোচন করেন। তিনি কি জিনের সাথে অন্ধকার চুক্তি ভেঙে তার গ্রামকে বাঁচাতে পারবেন?

ভুলের অভিশাপ

লাইলা গভীর নিঃশ্বাস নিল, পুরোনো ম্যানসনের ঠান্ডা ধুলোমাখা হাওয়া তার নাকে ঢুকে গেল। তার দূর সম্পর্কের কাকা থেকে প্রাপ্ত এই বাড়িটি কয়েক দশক ধরে পরিত্যক্ত ছিল। লোকমুখে, গ্রামের পুরনোরা বাড়িটিকে নিয়ে কানাকানি করতো – অশুভ আত্মা, অন্ধকারের চুক্তি। কিন্তু লাইলা, প্রত্নতত্ত্বের ছাত্রী, এইসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করতো না। অথচ, এখন, ঘরের জানালা দিয়ে হিমেল বাতাসে কাঁপা পর্দার দিকে চেয়ে থাকতে গিয়ে, তার মনেও একটা আশঙ্কাজনক প্রশ্ন জেগে উঠল... এই বাড়ি কি আসলেই নিরীহ?

ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়ে, লাইলা একটি মোমবাতি নিয়ে নিচে নেমে গেল। একসময় ধনী একটি পরিবারের বাসস্থান এই বাড়ি, এখন অবহেলা আর সময়ের ভারে ক্ষয়ে গেছে। প্রতিটি পদক্ষেপে মেঝে ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ তুলতে থাকে, আর ধুলোয় লাইলার কাশি বেরিয়ে যায়। স্যাঁতসেঁতে একটা গোপন দরজার সন্ধান পেয়ে, তা খুলতেই একটা সংকীর্ণ সিঁড়ি চোখে পড়ল যা নীচের তলায় গেছে। একটা অজানা কৌতুহল তাকে ভর করে...

অতীতের অন্ধকার

সিঁড়ির শেষে আধো-অন্ধকার একটা স্যাঁতসেঁতে ঘরে সে পৌঁছে গেল। ঘরের এক কোণে একটি লকারের সন্ধান পেয়ে, কাঁপা হাতে তা খুলতেই চোখের সামনে ধরা দিল একটি পুরনো চামড়ায় বাঁধানো বই, আর তার সাথে একটি ত intricate silver locket. As Laila put it on, she senses a shift as if an invisible presence has entered her mind.

সারারাত ধরে, লাইলার ঘুমের দেশে আবির্ভাব হয়েছিল বিকট, অমানবিক সব স্বপ্ন। খসখসে গলায় কে যেন একটা অচেনা ভাষায় ফিসফিস করছিল, আলোছায়ায় একটা দীর্ঘ, মোচড়ানো চেহারা ভেসে উঠছিল... কয়েকদিন যাবত ঘরে অদ্ভুত ঘটনাগুলিও বাড়তে থাকে। ছোটখাটো জিনিস নিজের থেকে সরে যায়, অন্ধকার কোণ থেকে বিকট হাসির শব্দ ভেসে আসে। মাঝে মাঝে, কারুর অদৃশ্য চোখের উপস্থিতি সে টের পায়। লাইলার জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে

গ্রামের প্রধান

খানিকটা অস্থির আর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে, লাইলা গ্রামের সবথেকে বয়স্ক ও সম্মানিত প্রধানের দেখা করতে যায়। তারা এই বাড়ি সম্পর্কে কী জানে, আর এই আশ্চর্য সব ঘটনার ব্যাখ্যা আছে কিনা, তা জানতে চায় সে। প্রধান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুরু করেন...

"বহু বছর আগে, এই গ্রামকে এক শক্তিশালী জ্বীন সুরক্ষা দিতেন, নাম তার জাহরা। আমাদের পূর্বপুরুষেরা তার সাথে একটা চুক্তি করেছিলেন। জাহরা আমাদের রক্ষা করতো, বিনিময়ে পুরো গ্রাম নিয়মিত ওকে নৈবেদ্য দিতো। কিন্তু, লোভ মানুষকে অন্ধ করে দেয় বাছা। তোমার কাকা জাহরাকে দাস বানিয়ে অসীম ক্ষমতা চেয়েছিলেন..."

ভুলের পরিণাম

প্রধানের গল্পানুযায়ী, এক কুটিল পরিকল্পনা করে লাইলার কাকা জাহরাকে আটক करनेর চেষ্টা করেছিলেন। শেষ মুহূর্তে কিছু ভুল হয়ে যায়, এবং প্রক্রিয়াটা বিফল হয়। রুষ্ট জাহরা গ্রাম এবং বাড়িটির উপর একটা ভয়ানক অভিশাপ নামিয়ে দেন। চুক্তিটা চুরমার হয়ে গেছে, দুর্বল এবং বিপজ্জনক জ্বীনরা এবার মুক্ত, আর জাহরার শক্তি দিন দিন ক্ষয় হচ্ছে। লাইলাকে ঘিরে অশুভ শক্তিগুলি পাক খায়...

হতাশার সমুদ্র

প্রধানের কথা শোনার পর লাইলার মনটা ভারী হয়ে যায়। লকারে লুকিয়ে থাকা বইটিই সব অশান্তির উৎস। ওই বিচিত্র চিহ্ন এবং অজানা ভাষায় লেখা বইটা পুড়িয়ে ফেললে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে? কিন্তু, একটা ম্লান আশাও জেগে ওঠে... প্রধানের মুখে সে শুনেছে, এই বইয়ের মাধ্যমেই হয়তো অভিশাপকে ভাঙা সম্ভব। হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না!

দিনের পর দিন, লাইলা বইটির একটা অর্থোদ্ধার করার চেষ্টায় বসে যায়। ঘরের আলো নিভিয়ে, মোমবাতির আলোয় বসে সে অদ্ভুত প্রতীকগুলিকে ডিকোড করতে চেষ্টা করে। এই সময় তার খুব সাহস লাগে, কারণ সবসময় মনে হয় অন্ধকারের কোণ থেকে কেউ ওকে পর্যবেক্ষণ করছে। লকেটটি ওর বুকে ঠান্ডা ভারের মতো ঝুলতে থাকে, আর ঘুমের মধ্যে ওই দুঃস্বপ্ন তাড়িয়ে বেড়ায়।

প্রতারক জ্বীন

এক নির্জন রাতে, বাড়ির বাগানের ধারে একটা ছায়ামূর্তি লাইলার চোখে পড়ে। দীর্ঘ, ক্ষীণ, কিন্তু মানুষের আকারের মত নয়... এটা কি কোনো জ্বীন? ভয়ে লাইলার শরীর কাঁপতে থাকে, তবুও কৌতুহল তাকে জয়ী করে। সে আস্তে করে ছায়াটির দিকে এগিয়ে যায়। চাঁদের আলোয় মুখটা পরিষ্কার দেখা যাওয়ার পরে লাইলা অবাক হয়। দুর্বল এবং শুকনো মুখে যেন এক আক্ষেপের ছাপ।

"ভয় পেয়ো না," ক্ষীণ কণ্ঠে figureটি বলে ওঠে, "আমি এসেছি তোমাকে সাহায্য করতে।"

অবিশ্বাস মেশানো স্বরে লাইলা জানতে চায়, "কিন্তু তুমি কে? কেন আমাকে সাহায্য করবে?"

"আমি জাহরার স্বজন," comes the answer, "অভিশাপটা দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি তোমাকে এই বাঁধন থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে চাই, কিন্তু একটা শর্ত আছে..."

কঠিন চুক্তি

লাইলার ঘুম ভেঙে যায়। এই জ্বীন বিশ্বাসযোগ্য কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে, কিন্তু অন্য উপায় কী আছে? লকেটে আবদ্ধ শক্তি তাকে দিনদিন দুর্বল করে দিচ্ছে। জাহরার স্বজনকে খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত ও নেয়, আশায় যে তাকে বইটি বোঝার পথ দেখাতে পারবে।

কিন্তু, ওই জ্বীনের কথাই ঠিক ছিল। লাইলার সাথে নিজের শক্তির একটি অংশ ও বিনিময় করতে চায়, যে শক্তি নিয়েই একমাত্র জাহরাকে ডেকে তার ক্ষমা প্রার্থনা করে চুক্তিটা সংশোধন করা সম্ভব। লাইলা কি সেই ভয়ানক চুক্তিতে রাজি হবে? গ্রামের ভালোর জন্য, এই জ্বীন দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া কি আর কোনো পথ খোলা আছে তার কাছে?

অশুভ রীতি

পুরোনো বইয়ের বিকৃত নির্দেশগুলো অনুসরণ করে, লাইলা একটা ভয়ঙ্কর আচারের প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। প্রতিটা পদক্ষেপই যেন তাকে অভিশাপের আরও গভীরে টেনে নিচ্ছে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে বিশ্বাস করে এটাই একমাত্র পথ। এক কালো, ঝড়ের রাতে বাড়ির পেছনের বাগানে সে একটা বৃত্ত আঁকে, মুখে বইয়ের অদ্ভুত মন্ত্রগুলো উচ্চারণ করতে থাকে। হিমেল হাওয়ায় কান্নাভরা চিৎকারের মত ঝড় বয়ে যায়, আর গাছগুলো যেন বুক ফাটানো আর্তনাদ করতে থাকে।

তার ডাকে সাড়া দেয় জাহরা। ক্ষীণ, ক্ষুব্ধ... কিন্তু আশ্চর্যভাবে করুণাও মেশানো তার চোখে। স্বজনের কাছ থেকে বিদ্রোহ এবং অভিশাপের গল্প শুনে, তার রাগ কিছুটা প্রশমিত হল। লাইলার অসীম সাহস এবং অনুশোচনার গভীরতা তাকে মুগ্ধ করে।

"তুমি অভিশাপ ভাঙতে চাও, কিন্তু তার কি মূল্য দিতে প্রস্তুত?" জাহরা বলে।

লাইলা আগেই ভেবে রেখেছিল। গলায় পরিহিত লকেটটির দিকে তাকিয়ে সে বলে, "এই অভিশস্ত শক্তি আমি ফিরিয়ে দিতে চাই। প্লিজ... গ্রামটাকে বাঁচান।"

ত্যাগ ও মুক্তি

এক ঝলকে চোখ বন্ধ করে লাইলা লকেটটি খুলে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ভয়ঙ্কর এক চিৎকার শোনা যায়, আর তার সাথে সাথে জমে থাকা সব অশুভ শক্তি আকাশে মিলিয়ে যায়। সে মাটিতে ভেঙে পড়ে, তার শরীর যেন হালকা হয়ে গেছে। ঝড় থেমে যায়, একটা অজানা শান্তি নেমে আসে গ্রামের উপর।

জাহরা তার হাত বাড়িয়ে দেয়। "তোমার পূর্বপুরুষের জন্য গ্রামবাসী অনেক কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু, তাদের বংশে তুমি এক আলো। আমি আগের চুক্তিটা মেনে চলতে রাজি আছি... কিন্তু একটা শর্তে।"

লাইলা ক্লান্তভাবে মুখ তুলে চায়। তাকেই কি বাকি জীবন গ্রাম এবং জাহরার মধ্যে ওই বাঁধন হয়ে বেঁচে থাকতে হবে? হয়তো, এটাই তার ভাগ্য...

জাহরা আবার বলে ওঠে, "আমার আর তোমাকে, মর্ত্যলোক আর জ্বীনদের মাঝে সবসময় এক সেতুবন্ধন দরকার। তবে, তোমাকে একা সেই ভার বইতে হবে না। এই গ্রামের পবিত্র আত্মাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমি তোমার বংশধরদের উপর দিচ্ছি।"

নতুন শুরু

সপ্তাহ, মাস পেরিয়ে যায়। চুক্তি যেমন ছিল তেমনই জাহরার শক্তি গ্রামকে ফিরে পায়, আর লাইলার জীবন আবার স্বাভাবিক হতে থাকে। শুধু একটা তফাৎ – এক বছর পর, তার একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ওর চোখে মায়ের মতোই একটা জানার আগ্রহের ছাপ, আর বড় হওয়ার সাথে সাথে একটা অদ্ভুত ক্ষমতা প্রকাশ পায়...

লাইলা জানে, তার মেয়ে, এবং মেয়ের পরের বংশধর, সবাই এই গ্রামের রক্ষাকবচ হয়ে বেঁচে থাকবে। গ্রামবাসীরা আজও সেই পুরোনো ম্যানসনের কথা বলে, কিন্তু এখন তারা ভয় পায় না। ওই বাড়ি থেকে যে আলো এসেছিল, তাই সবার মনে আশা জাগিয়ে রেখেছে।

Read more

সুন্দরবনের ভূতের গল্প: হারিয়ে যাওয়া পথ

সুন্দরবনের ভূতের গল্প: হারিয়ে যাওয়া পথ

শীতের এক সকাল। ঢাকা থেকে আসা একটি পরিবার - বাবা আসিফ, মা তানিয়া, এবং তাদের দুই সন্তান রিমি ও রনি - সুন্দরবনে বনভোজনে এসেছে। সকাল থেকেই

By কা,আন