বটগাছের ডাল

বটগাছের ডাল

বৃষ্টি ঢলছে অঝোর ধারায়, একনাগাড়ে। বজ্রের কর্কশ আওয়াজে কেঁপে উঠছে পুরো আকাশ। বিকেল হতে না হতেই মনে হচ্ছে যেন গভীর রাত। দিগন্ত জুড়ে শুধু মেঘ আর মেঘের গর্জন। শফিক, এক ক্লান্ত পথিক, পুরনো এক বটগাছের আশ্রয়ে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে লাগল। গাছটি এতো প্রাচীন যে মনে হচ্ছে যেন সে সৃষ্টির আদিকাল থেকে এই বিরান ময়দানের দিকে রহস্যময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

মুহূর্তের মধ্যেই অন্ধকার নেমে এলো। শফিক ভয়ে বুকের ভেতর কুঁকড়ে যাওয়া অশরীরী ভাব অনুভব করতে লাগল। মনে হচ্ছিল বটগাছের পুরনো ও বিশাল ডালগুলো নড়ে উঠছে...না, না, চলছেই না...কিন্তু কি এই অদ্ভুত ছায়া? ডালগুলো থেকে ঝুলছে ক্ষীণ, লম্বা হাতের মত অসংখ্য কালো ছায়ামূর্তি। ঠান্ডা আলোয় গা ছমছম করতো শফিকের।

কী করা উচিত? দৌড়ে পালাবেে? কিন্তু কোথায়? অন্ধকার রাত, অচেনা স্থান, চারদিকে নিস্তব্ধতা, শুধু মাঝে মাঝে বন্য হাওয়ার হু হু শব্দ। হঠাৎ, শফিকের চোখ আটকে গেল। এই বৃষ্টির ফোঁটাগুলো বুঝি? না, এই তো চোখের জল! ক্লান্ত পথিকটির ভয় আর সইছিল না। বুক ফেটে আর্তনাদ করে কেঁদে উঠল সে।

আর্তনাদের কোনো ভাষা হয় না। কিন্তু এই বটগাছে থাকা বলে মনে হয়নি কখননো। বটগাছের কালো ছায়াগুলো এবার যেন নড়তে শুরু করল। মনে হল তারা শফিকের কান্নার জল খাচ্ছে, লোভী জিভ বার করে নামিয়ে আনছে ডাল থেকে। শফিকের চোখ কপালে উঠল! আর সইল না। দৌড় দিল অন্ধকারের দিকে।

শফিক দৌড়াতে লাগলো। মুষলধারে বৃষ্টি তার চোখেমুখে আছড়ে পড়ছিল। কিন্তু থামবেেনা সে। দৌড়াতেই হবে। কিন্তু কপাল! হঠাৎ থমকে দাঁড়াল সে। সামনে কি যেন বাঁধা। হাত বাড়িয়ে দেখতে পেল শীতল পাথর। একটা দেয়াল? কিন্তু মাঠের মাঝখানে দেয়াল কেন? তারপরই বুঝল, এটা একটা পুরনো, ভাঙাঘর। এর দেয়াল থেকেই নিঃসৃত হচ্ছিল এই বটের অস্বাভাবিক শাখাপ্রশাখা।

ভয় কাঁপুনি দিয়ে শফিক বাড়িটার ভেতর পা বাড়াল। এতো অন্ধকার! চোখে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। কিন্তু বৃষ্টি থেকে বাঁচা তো জরুরী।আস্তে আস্তে এগোতে লাগলসে। কিন্তু থমকে গেলো হঠাৎ।

"কে...কে আছ এখানে?" কাঁপা কাঁপা স্বর উঠল বাতাসে। এতোক্ষণে মনে পড়ল, সে কিছুক্ষণের জন্য কথা বলা ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?

"তু...মি...? " অন্ধকারের মাঝ থেকেএক মৃদু, ক্ষীণ কণ্ঠ ভেসে এল। কিন্তু শফিক কিছুই দেখতে পেলনা। চারপাশে শুধু অন্ধকার... আর অন্ধকার।

শেষ?

হঠাৎ বটগাছের নিচে থেকে শফিকের আর্তনাদ শুনতে পেল গাঁয়ের লোকজন। সকালবেেলা এসে, তার জ্ঞানহারা দেহটা উদ্ধার করল তারা। তবে বটগাছের তলায় সেই বাড়িটা কেউ দেখতে পেল না। মারা যাওয়ার আগের রাতে কী দেখেছিল শফিক? সেই ঘটনার একমাত্র সাক্ষী। হয়তো সে সত্যিই ভুল দেখেছিল। আর হয়ত, আসলেই কিছু একটা সেদিন ঘটেছিল...কে জানে!

Read more

রক্তজবা (The Red Hibiscus)

রক্তজবা (The Red Hibiscus)

এক ভুতুড়ে জমিদার বাড়ি, রক্তজবার অভিশাপ, আর রক্তির প্রতিশোধের ভয়ংকর গল্প "রক্তজবা"। বাংলার লোমহর্ষক লোককথার আবহে রচিত এই গল্প আপনাকে নিয়ে যাবে রহস্য আর ভয়ের অন্য এক জগতে।

কা,আন