ডাক্তার রিফাত - Doctor Rifat
হাসপাতালের ভেতর থেকে আসা অদ্ভুত আর্তনাদ আর অশরীরি উপস্থিতি... রিফাত বুঝতে পারে, এখানে ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে।
শহরের কোলাহল ছেড়ে একাকী নির্জন পথ ধরে এগিয়ে চলেছে ডাক্তার রিফাত। গন্তব্য, শহরের বাইরে এক পুরনো, পরিত্যক্ত হাসপাতাল - 'আশার আলো'। নতুন চাকরিতে যোগদান করতে যাচ্ছে সে।
হাসপাতালে পৌঁছেই রিফাতের মনে সঞ্চার হয় অদ্ভুত ভয়ের। ভেঙে পড়া দেয়াল, জঙ্গলে ঢাকা চত্বর, আর ভেতর থেকে আসা অন্ধকারের ডাক... সবকিছুই যেন ভয়ঙ্কর রহস্যের ইঙ্গিত বহন করছে।
ভেতর প্রবেশ করে রিফাত পুরনো কর্মীদের থেকে জানতে পারে হাসপাতালটার ভৌতিক ইতিহাস। রাতের বেলায় এখানে কারো হাঁটার আওয়াজ, অপারেশন থিয়েটার থেকে অদ্ভুত আর্তনাদ, আর ধোঁয়াটে অশরীরী কোনো উপস্থিতির আভাস - এই হাসপাতাল আসলে জীনদের আড্ডা!
রিফাতের ঘুম ভাঙলো হঠাৎ এক ভয়ঙ্কর শব্দে। আলো নিভে গেল। ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা তার মুখে এসে লাগলো। অন্ধকারে কে যেন ভারী পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে... রিফাতের হৃৎস্পন্দন তীব্র হয়ে উঠলো। ঘামে ভিজে উঠলো তার কপাল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে জানালার ধারে এগিয়ে গেলো। ভেতর থেকে আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে অপারেশন থিয়েটারে। রিফাত বুঝতে পারলো, এটা আর কল্পনা নয়, বাস্তব ভয়। জীনদের উপস্থিতি এখন তার ঘরেও!
দ্বিতীয় অধ্যায়: মুক্তির মন্ত্র
কিন্তু রিফাত ভয়ের কাছে হার মানতে রাজি নয়। সে জীনদের সম্পর্কে জানার জন্য গভীর পড়াশুনো শুরু করে। একদিন, এক পুরনো জাদুকরের বংশধরের সন্ধান পায় সে। সেই বৃদ্ধ মহিলার কাছে ছিল জাদুকরের লেখা নোটবই। সেখানে জীনদের বশে আনার কিছু মন্ত্রের উল্লেখ ছিল।
রিফাত দিনরাত সেই মন্ত্র আয়ত্ত করতে লাগলো। এই সময় জীনদের উপদ্রব আরও বাড়তে লাগলো। কিন্তু রিফাত অবিচল রইল। অবশেষে 'আশার আলো' হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দাঁড়ালো সে।
রাতের অন্ধকারে ভয়ঙ্কর, কুৎসিত জীনেরা রিফাতকে ঘিরে ধরলো। রিফাত জাদুকরের নোটবই খুলে মন্ত্র উচ্চারণ করলো। মন্ত্রের প্রভাব পড়তে লাগলো জীনদের উপর। তারা কষ্ট পেতে লাগলো, রিফাতকে আর আক্রমণ করতে পারলো না। একসময় একটা জোরালো ঝলকানির সাথে সমস্ত জীন গায়েব হয়ে গেল।
তৃতীয় অধ্যায়: প্রতিশোধের আগুন
'আশার আলো' হাসপাতাল মুক্তি পেয়েছে জীনদের হাত থেকে। হাসপাতালটি আবার চালু হয়েছে। রিফাতের সাহসিকতার ফলে দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা বিনামূল্যে সেবা পেতে লাগলো। কিন্তু সব জীন তো আর মুক্ত হয়নি। হাসপাতালে আটকে থাকা জীনদের নেতা ছিল 'শাহজাহান', সে মন্ত্রের প্রভাবে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেও রিফাতের প্রতি তার প্রতিশোধের আগুন তীব্রতর হয়ে উঠেছে।
শাহজাহান রিফাতের পরিবারের সদস্যদেরকে হুমকির মুখে ফেলে। রিফাত বুঝতে পারে, শাহজাহানকে থামাতে হলে তাকে নিজের সবচেয়ে বড় ভয়ের মুখোমুখি হতে হবে। সে জীনদের জগতে প্রবেশ করে শাহজাহানের সাথে মুখোমুখি হবার জন্য।
রিফাতের জীনদের জগতে অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়। অজানা বিপদের মুখোমুখি হতে হতে শেষ পর্যন্ত সে শাহজাহানের সম্মুখীন হয়। তাদের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়। রিফাত তার সাহস, বুদ্ধিমত্তা, আর নতুন আয়ত্ত করা জাদুর ক্ষমতা ব্যবহার করে অবশেষে শাহজাহানকে পরাজিত করে।
চতুর্থ অধ্যায়: জাদুবিদ্যার জগতে
জীনদের জগত থেকে ফিরে আসে রিফাত। তার এই অভিজ্ঞতা তাকে করে তোলে আরও শক্তিশালী, আরও সাহসী। কিন্তু এখন তার সামনে নতুন পথ উন্মোচিত। জীনদের জগতে সে জাদুবিদ্যা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছে। এই জ্ঞান ব্যবহার করে একজন জাদুকর হিসেবে কাজ শুরু করতে পারে সে।
রিফাত বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনার সমাধানে জাদুর সাহায্য নেয়। হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে বের করা, অপরাধীদের শনাক্ত করা, এমনকি অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করা - রিফাতের জাদু সব সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।সে জাদুবিদ্যা শেখা নয়, জীনদের বিশ্ব সম্পর্কেও জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে, তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং তাদের সাথে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা শুরু করে।
পঞ্চম অধ্যায়: জীনদের যুদ্ধ
শাহজাহানের পরাজয়ে যে মানুষ আর জীনদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তৈরি হবে, সেই আশা ভেঙে যায়। কিছু জীন শাহজাহানের প্রতিশোধ নিতে চায়, অন্যরা মানুষের জগতে আধিপত্য বিস্তার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এর মাঝে রিফাত জানে, জীনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এড়ানো অসম্ভব। সে মানুষদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করে। জাদুবিদ্যা, অস্ত্র প্রশিক্ষণ - সব বিষয়েই তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়।
রিফাত আর একা লড়তে চায় না। সে জীনদের বিরুদ্ধে লড়াই করা অন্য জাতি ও গোষ্ঠীর সাথে মিত্রতা স্থাপন করে। অবশেষে, যুদ্ধ শুরু হয়। জীনদের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রিফাত ও তার মিত্ররা সাহসের সাথে লড়াই করে।
যুদ্ধ দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী হয়। অনেক মানুষ ও জীন তাদের প্রাণ হারায়। অবশেষে, রিফাত ও তার মিত্ররা জীনদের পরাজিত করে। কিন্তু এই যুদ্ধের ফলে বিশ্ব চিরতরে বদলে যায়। মানুষ ও জীনদের মধ্যে সম্পর্ক আর কখনো আগের মতো হবে না।
ষষ্ঠ অধ্যায়: জাদুর অন্ধকার দিক
যুদ্ধের সময় রিফাত জাদুর অন্ধকার দিকের মুখোমুখি হয়। সে বুঝতে পারে, জাদু শুধুমাত্র ভালো কাজে লাগানো যায় না, এর ভয়ংকর পরিণতিও হতে পারে। এই ভয়ংকর জাদুর দ্বারা সে প্রলুব্ধো হয়, যে শক্তি তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়েছিলো, সেই শক্তিই হয়তো একদিন তাকে ধ্বংসের পথেও নিয়ে যেতে পারে।
উপসংহার
যুদ্ধ শেষ হলেও রিফাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। জাদুর অন্ধকার দিক নিয়ন্ত্রণে রাখা, জীনদের সাথে নতুন সম্পর্ক স্থাপন করা - এসব বিষয় এখন তার দায়িত্ব। এই ক্ষতবিক্ষত জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকেই এবার তাকিয়ে আছে রিফাত।