জ্বীনের বাজার ও কালু মাঝি

জ্বীনের বাজার ও কালু মাঝি

সূর্য ডুবে গেছে অনেক আগেই। নদীর পানিতে তারার আলো ঝিকিমিকি করছে। কালু মাঝি তার ছোট্ট ডিঙি নৌকা নিয়ে একা মাছ ধরছিলেন। হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। বাতাস জোরে বইতে শুরু করে। কালু মাঝি বুঝতে পারেন একটি ভয়ানক ঝড় আসছে।

ঝড়ের বেগ এত বেশি ছিল যে কালু মাঝির ছোট্ট নৌকা উল্টে যায়। কালু মাঝি ঠান্ডা জলে পড়ে যান। তিনি ডুবে যাচ্ছিলেন, কিন্তু কোনোমতে একটি কাঠের টুকরো আঁকড়ে ধরে বাঁচেন। তারপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

যখন কালু মাঝি জ্ঞান ফিরে পান, তখন তিনি দেখতে পান যে তিনি একটি অজানা দ্বীপে পৌঁছে গেছেন। দ্বীপটি অনেক অদ্ভুত ছিল। চারদিকে কোন গাছপালা নেই, শুধু ধূসর মাটি আর কালো পাথর। আকাশে একটি অদ্ভুত লাল সূর্য ঝুলছে। কালু মাঝি ভয় পেয়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন না এই দ্বীপ কোথায় অথবা এখান থেকে তিনি কিভাবে বাড়ি ফিরে যাবেন।

কালু মাঝি দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন একটি বিশাল বাজার। বাজারে অনেক মানুষ এবং অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিসপত্র ছিল। কালু মাঝি আগে কখনও এমন বাজার দেখেননি।

বাজারে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কালু মাঝি দেখতে পেলেন মানুষের মাথা ওয়ালা পাখি, যারা মানুষের ভাষায় কথা বলছে। তিনি দেখতে পেলেন উড়ন্ত ঘোড়া, যারা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে।

তিনি দেখতে পেলেন কথা বলা গাছ, যারা তাদের শাখা-প্রশাখা নিয়ে ইশারা করছে। তিনি অবাক হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন না এসব কিভাবে সম্ভব।

হঠাৎ কালু মাঝির সামনে একজন লোক এসে দাঁড়াল। লোকটি দেখতে অনেক ভয়ংকর ছিল। তার চোখ দুটো জ্বলন্ত অঙ্গারের মত লাল ছিল এবং তার দাঁতগুলো ছিল অনেক লম্বা এবং ধারালো। তার শরীর থেকে একটি অদ্ভুত ধোঁয়া বের হচ্ছিল।

লোকটি কালু মাঝিকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি চাও?" তার কণ্ঠস্বর ভয়ঙ্কর ছিল, যেন শিয়ালের কান্না।

কালু মাঝি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, "আমি এখানে কিভাবে এসেছি জানি না। আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই।"

লোকটি একটি ভয়ঙ্কর হাসি হেসে বলল, "এটা জ্বীনের বাজার। তুমি এখান থেকে যেতে পারবে না। তুমি এখন আমাদের বন্দি।"

কালু মাঝি আরও ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে তিনি একটি জ্বীনের রাজ্যে এসে পড়েছেন।

জ্বীনেরা কালু মাঝিকে তাদের রাজ্যে থাকার প্রস্তাব দিল। তারা তাকে নানা রকম প্রলোভন দেখাল। তারা তাকে বলল যে তারা তাকে অনেক ধন দৌলত দেবে। তারা তাকে একটি সুন্দর বাড়ি দেবে।

তারা তাকে তাদের রাজ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বানাবে। তারা তাকে অমরত্ব দেবে।

কিন্তু কালু মাঝি এই সব প্রলোভনে পড়লেন না। তিনি তার পরিবারের কথা মনে করলেন। তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের ছাড়া থাকতে চাইলেন না। তিনি জানতেন যে জ্বীনের রাজ্যে থাকা মানে চিরকালের জন্য মানুষের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।

কালু মাঝি জ্বীনদের বললেন, "আমি তোমাদের প্রস্তাবে আগ্রহী নই। আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই।"

জ্বীনেরা রাগ করে গেল। তাদের চোখ লাল হয়ে গেল। তারা কালু মাঝিকে একটি অন্ধকার কোঠায় বন্দি করে ফেলল।

কালু মাঝি অনেক দিন জ্বীনদের বন্দি ছিলেন। তিনি প্রতিদিন তার পরিবারের কথা ভাবতেন। তিনি তাদের ছাড়া থাকতে পারছিলেন না। কোঠার ভেতর শুধু অন্ধকার আর ঠান্ডা। কালু মাঝি ভয় পেতে শুরু করলেন। তিনি জানতেন না জ্বীনেরা তার সাথে কি করবে।

একদিন কালু মাঝি জ্বীনদের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। তিনি জ্বীনদের অনেক দিন ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি তাদের দুর্বলতা জানতে পেরেছিলেন। জ্বীনেরা নাকি অমাবস্যার রাতে দুর্বল হয়ে পড়ে।

এক অমাবস্যার রাতে কালু মাঝি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। তিনি অন্ধকার কোঠার একটি ছোট জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসেন। জ্বীনেরা ঘুমাচ্ছিল। কালু মাঝি চুপিচুপি বাজার থেকে বেরিয়ে আসেন এবং নদীর ধারে চলে যান।

কিন্তু জ্বীনেরা হঠাৎ জেগে উঠে। তারা দেখতে পায় যে কালু মাঝি পালিয়ে যাচ্ছে। তারা রাগে গর্জে উঠে এবং কালু মাঝিকে ধাওয়া করে।

কালু মাঝি নদীর ধারে এসে একটি নৌকা খুঁজে পান। তিনি নৌকায় চড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জ্বীনেরা তাকে ছাড়তে চায় না। তারা আকাশে উড়ে তার নৌকার পিছু নেয়।

জ্বীনেরা কালু মাঝির নৌকার উপর আগুনের গোলা ছুঁড়তে থাকে। কালু মাঝি কোনোমতে নৌকা চালিয়ে পালিয়ে যান। জ্বীনেরা তাকে ধাওয়া করে, কিন্তু তারা তাকে ধরতে পারে না।

কালু মাঝি অনেক দূরে চলে আসেন। জ্বীনেরা আর তাকে অনুসরণ করে না। কালু মাঝি নিরাপদ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যান।

কালু মাঝি যখন বাড়ি ফিরে গেলেন, তখন তার পরিবার খুব খুশি হল। তারা তাকে জড়িয়ে ধরল। কালু মাঝি তার পরিবারকে জ্বীনের বাজারের ভয়ঙ্কর কাহিনী বললেন। তারা অবাক হয়ে গেল। তারা বিশ্বাস করতে পারছিল না যে এমন কিছু সম্ভব।

কালু মাঝি তার অভিজ্ঞতা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে পৃথিবীতে অনেক রহস্য আছে। আমরা যা দেখি বা জানি, তা শুধু একটি ছোট অংশ। আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছু আছে যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।

কালু মাঝি আবার নিয়মিত মাছ ধরতে যেতে লাগলেন। কিন্তু তিনি আর কখনও ঝড়ের দিন নদীতে যাননি। তিনি সবসময় সাবধান থাকতেন যাতে আবার কোন অজানা দ্বীপে পৌঁছে না যান। তিনি তার অভিজ্ঞতা গ্রামের অন্যান্য মাঝিদের বলতেন। তিনি তাদের সাবধান করে দিতেন যাতে তারা ঝড়ের দিন নদীতে না যায়।

কালু মাঝির এই গল্প গ্রামে একটি কিংবদন্তির রূপ নেয়। লোকেরা এই গল্প শুনে ভয় পেত এবং আশ্চর্য হত। তারা বুঝতে পারত যে পৃথিবীতে অনেক রহস্য আছে যা আমরা জানি না।

Read more

সুন্দরবনের ভূতের গল্প: হারিয়ে যাওয়া পথ

সুন্দরবনের ভূতের গল্প: হারিয়ে যাওয়া পথ

শীতের এক সকাল। ঢাকা থেকে আসা একটি পরিবার - বাবা আসিফ, মা তানিয়া, এবং তাদের দুই সন্তান রিমি ও রনি - সুন্দরবনে বনভোজনে এসেছে। সকাল থেকেই

By কা,আন
এডিনবার্গ ক্যাসেল: স্কটিশ ইতিহাস, রহস্য আর ভূতের সমাবেশ (Edinburgh Castle: A Gathering of Scottish History, Mysteries and Ghosts)

এডিনবার্গ ক্যাসেল: স্কটিশ ইতিহাস, রহস্য আর ভূতের সমাবেশ (Edinburgh Castle: A Gathering of Scottish History, Mysteries and Ghosts)

স্কটল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী রাজধানী এডিনবার্গ শহরের বুকে গর্ব করে দাঁড়িয়ে আছে এডিনবার্গ ক্যাসেল। এটি শুধু একটি ক্যাসেল নয়, এটি স্কটল্যান্

By কা,আন