মধ্যরাতের রিকশা
অফিস থেকে ফেরার পথে অনেক রাত হয়ে গেছে। রাস্তা নির্জন। শুধু একটা একাকী রিকশা দাঁড়িয়ে। রিফাতের মনটা খারাপ, বাসায় দ্রুত পৌঁছাতে চায়। রিকশায় উঠে সে ঠিকানা বললো। রিকশাওয়ালা কিছু বললো না, শুধু রিকশা চালাতে লাগলো।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর রিফাতের মনে সন্দেহ জাগলো। রিকশা যেন ভুল পথে চলেছে। রিফাত রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো, "এই, ভাই, তুমি কি ঠিক পথে যাচ্ছো?"
রিকশাওয়ালা কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলো। তার মুখের দিকে তাকিয়ে রিফাত ভয় পেয়ে গেলো। রিকশাওয়ালার চোখ দুটো ছিলো真っ赤, আর মুখে একটা অদ্ভুত হাসি।
"ঠিক পথে যাচ্ছি," রিকশাওয়ালা বললো। "তুমি চিন্তা করো না।"
রিফাত আরো ভয় পেয়ে গেলো। সে রিকশা থেকে নামতে চাইলো, কিন্তু রিকশাওয়ালা তাকে নামতে দেয়নি।
"তুমি এখন আর নামতে পারবে না," রিকশাওয়ালা বললো। "তুমি আমার হাতে বন্দি।"
রিফাত চিৎকার করতে চেষ্টা করলো, কিন্তু তার গলা থেকে কোনো শব্দ বেরোলো না। রিকশাওয়ালা তখন আরো জোরে হাসতে লাগলো।
রিকশা দ্রুত গতিতে ছুটে চলতে লাগলো। রিফাত বুঝতে পারছিলো না, তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে রিকশাওয়ালা। তার চোখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর রিকশা থেমে গেলো। রিফাত চোখ খুলে দেখলো, সে একটা অচেনা জায়গায় এসে পৌঁছেছে। চারপাশে অন্ধকার, শুধু একটা পুরনো কবরস্থান।
রিকশাওয়ালা রিকশা থেকে নেমে রিফাতের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। রিফাত ভয়ে চিৎকার করতে চেষ্টা করলো, কিন্তু তার গলা থেকে কোনো শব্দ বেরোলো না।
রিকশাওয়ালা রিফাতের কাছে এসে তার হাত ধরলো। রিফাতেরহাতটা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
"চলো," রিকশাওয়ালা বললো। "তোমার নতুন বাসস্থান দেখাই।"
রিকশাওয়ালা রিফাতকে টেনে নিয়ে কবরস্থানের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলছে। কবরগুলোর মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে রিফাত একটা খোলা কবর দেখলো। তারা সেই কবরের কাছে পৌঁছে গেলো।
"এটা তোমার নতুন বাড়ি," রিকশাওয়ালা বললো, একটা খুব অদ্ভুত হাসি হেসে। তারপর রিকশাওয়ালা হঠাৎ রিফাতকে ঠেলে দিলো। রিফাত খোলা কবরের মধ্যে পড়ে গেলো।
রিফাত কবরের চারপাশে হাতড়াতে লাগলো। কিন্তু কবরের দেয়ালগুলো খুব মসৃণ, আর খুব গভীর। রিফাত কোনোভাবেই কবর থেকে বেরোতে পারছিলো না।
রিকশাওয়ালা কবরের দিকে তাকিয়ে বিকট হাসি হাসতে লাগলো। তারপর, কয়েক ফावड़ा মাটি নিয়ে কবর বুজিয়ে দিতে লাগলো।
রিফাত চিৎকার করতে চেষ্টা করলো, হাত পা ছুঁড়লো। কিন্তু মাটির নিচে কিছুই শোনা যাচ্ছিল না, কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। শুধু অন্ধকার আর আর ভয়। মাটির ঠান্ডা স্পর্শ আর ঘনিয়ে আসতে থাকা নিঃশ্বাস...
সেদিন থেকে মধ্যরাতের নির্জন রাস্তায় কেউ আর রিফাতকে দেখেনি। শুধু মাঝেমধ্যে শোনা যায়, অফিস ছুটির অনেক রাতে, একটা একাকী রিকশা ছুটে চলেছে অদ্ভুত গতিতে। আর সেই রিকশার যাত্রীর গলা থেকে বেরোয় না আর কোনো শব্দ।