মৃত্যুর খেলা - Game of Death

মৃত্যুর খেলা - Game of Death

ঢাকার বুকে, কোনো এক গলির মোড়ের এক নির্জন বাড়িতে চারজন বন্ধু - রিয়াদ, তানভীর, মিথিলা আর পলাশ। ঝড়ের রাত, তুমুল বৃষ্টি। বন্ধুত্বের আড্ডা চলছিল চায়ের গ্লাস, আর গল্পের তালে হঠাৎ রিয়াদ একটা পুরোনো বাক্স খুললো। বাক্সটা পাওয়া গিয়েছিল তার নানীর বাড়ির স্টোররুম ঠেকে।

একটা কাঠের বাক্স, যার উপরে অজানা কিছু লেখা ছিল। ভেতরে ছিল একটা বোর্ড গেম। বোর্ডটা ছিল কালো রঙের, আর তার উপরে আঁকা ছিল অদ্ভুত ও ভয়ংকর চিহ্ন।

"এটা কি?" জিজ্ঞাসা করল পলাশ, কৌতূহলে চোখ দু'টো বড় করে বাক্সের দিকে তাকিয়ে।

"জানি না," বলল রিয়াদ, "হয়তো কোনো পুরোনো খেলা।"

"কিন্তু লেখাগুলো তো আমরা বুঝতে পারছি না," মিথিলা বলল।

রাত বাড়তে থাকলো, ঝড়ের তোড়ও কমল। কৌতূহল আর রোমাঞ্চের টানে তারা খেলাটা শুরু করলো। খেলার নিয়ম পড়তেই তারা একটু অবাক হলো। রাতের বেলায়, চারজনকে খেলতে হবে। প্রতিটি খেলোয়াড়ের একটা টেরাকোটা মূর্তি ছিল, আর তারা ঘূর্ণায়মান ঢেঁকি ঘুরিয়ে বোর্ডের উপর এগিয়ে যেত।

খেলাটা শুরু হতেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল। প্রথমে, ঘরের ঝাড়লণ্ড হতে লাগল। তারপর আসবাবপত্র নড়াচড়া করতে শুরু করল। একটা শীতল হাওয়া বয়ে গেল ঘরে, যদিও জানলা কড়া করে বন্ধ ছিল।

প্রথম পালায় তানভীরের টেরাকোটা মূর্তি "মৃত্যু" ঘরে পড়ল। সেই মুহূর্তেই তানভীরের বুকে হঠাৎ তীব্র ব্যথা হলো। সে চিৎকার করে উঠল, "আমার বুকে...!" কিন্তু শেষ করার আগেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তার মুখ নিমেষে নীল হয়ে গেল।

বাকি তিনজন বন্ধু স্তম্ভিত হয়ে গেল। কিছু বুঝে উঠতে পারল না তারা। ভয়ে তারা উঠতে পারল না, শুধু তানভীরের দিকে চেয়ে থাকল।

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মিথিলার পাশে রাখা একটা পুরোনো মোমবাতি নিভে গেল। ঘরে অন্ধকার নেমে এলো। হঠাৎ, একটা অশরীরী ঠাণ্ডা হাওয়া তাদের চারপাশে ঘুরতে লাগল। কানে এলো একটা ভয়ানক কাঁটা গলা হাসি, যেন শুকনো পাতা কাটাচ্ছে।

আঁধারের মধ্যে জ্বলজ্বল দুটো লাল চোখ দেখতে পেল তারা। চোখ দুটো ঘরের এক কোণ থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। চোখের আশেপাশে ছিল কালো ছায়া, যেন কোনো মুখ নেই, শুধু সেই জ্বলজ্বল চোখ।

"খেলা শেষ করতে হবে,"

একটা গভীর, ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বর ঘরে ঘুরে বেড়াল। কণ্ঠস্বরটা যেন তাদের খুলির মধ্যে থেকে আসছে।

কাপুরে কাপুরে রিয়াদ বলল,

"আমরা আর খেলতে চাই না।" কিন্তু তার কথা কেউ শোনে নি।

খেলাটা আবার শুরু হলো। এবার মিথিলার পালা এলো। তার টেরাকোটা মূর্তি "পাগলামি" ঘরে পড়ল। সেই মুহূর্তেই মিথিলার চিৎকার ভেদ করে দিল রাতের নিশ্চব্দ। কিন্তু সেটা চিৎকার ছিল না, আর্তনাদ। তার চোখ দু'টো ঘুরে গেল, সে হাসতে হাসতে বাজে কথা বলতে শুরু করল। কিন্তু হাসিটা ছিল আর্তনাদের মতো, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে ভিতর থেকে ছিঁড়ে ফেলছে।

পলাশ আর রিয়াদ আর সহ্য করতে পারল না। তারা দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হতে চাইল। কিন্তু দরজাটা খুলল না। যেন কেউ বাইরে থেকে সেটা জড়িয়ে ধরেছে। হঠাৎ, ঘরের দেওয়ালে একটা ফাটল দেখা দিল। ফাটলের ভিতর থেকে এক অন্ধকার হাত বের হলো। হাতটা দীর্ঘ, কঙ্কালের মতো, এবং তার নখগুলোতে ছিল ধারালো বাঁক।

পলাশ ভয়ে চিৎকার করে উঠল। সে জানালা ভাঙার চেষ্টা করল। কিন্তু সেটাও খুলল না। ভয়ে তারা দু'জনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরল।

শেষ পর্যন্ত, খেলাটা রিয়াদের হাতে শেষ হলো। তার টেরাকোটা মূর্তি "জীবন" ঘরে পড়ল। কিন্তু রিয়াদ জীবিত রইল না। সে হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি তার সাথে খেলাচ্ছে। কিন্তু সে হাসি ছিল না, বিকৃত চিৎকার। তার চোখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ল, শরীর কুঁচকে গেল যেন কোনো অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করছে।

পরের সকালে, পাশের বাড়ির লোকজন দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকল। দেখা গেল ঘরে তিনটি লাশ পড়ে আছে, তাদের চেহারা বিকৃত, যেন মৃত্যুর সাথে খেলায় তারা হেরে গিয়েছিল। ঘরে থাকা বাতাসটাও ঠাণ্ডা, নিথর। কোনো স্থান থেকে এক অদ্ভুত কান্নার আওয়াজ আসছিল, যেন কোনো হারানো আত্মা সেই ঘরেই কোথাও আটকে আছে।

পুলিশ এসে ঘটনাস্থল ঘুরল। কিন্তু তারা কোনো ক্লু পেল না। মৃত্যুর কারণও তারা ব্যাখ্যা করতে পারল না। এই খবর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। এলাকায় কৌতূহল আর ভয়ের তোড় জাগল। কেউ কেউ বলতে লাগল, ছেলেরা হয়তো কোনো খেলা খেলেছিল, যা ভালো ফল বয়ে আনেনি। অনেকেই আবার মনে করল, এটা কোনো খুনের রহস্য।

কিন্তু সত্যিটা কী, কেউ জানতে পারল না। রহস্যের মধ্যেই তিনজন বন্ধুর মৃত্যুর গল্পটা হয়ে গেল একটা ভয়ংকর কিংবদন্তী। আর "মৃত্যুর খেলা" বাক্সটা কোথায় চলে গেল, তাও কেউ জানে না। হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে, অপেক্ষা করছে পরের শিকারের জন্য।

Read more

রক্তজবা (The Red Hibiscus)

রক্তজবা (The Red Hibiscus)

এক ভুতুড়ে জমিদার বাড়ি, রক্তজবার অভিশাপ, আর রক্তির প্রতিশোধের ভয়ংকর গল্প "রক্তজবা"। বাংলার লোমহর্ষক লোককথার আবহে রচিত এই গল্প আপনাকে নিয়ে যাবে রহস্য আর ভয়ের অন্য এক জগতে।

কা,আন