পুরনো বাড়ি
তিন বন্ধু এক জরাজীর্ণ বাড়িতে আশ্রয় নেয়, শুধুমাত্র এর ভয়ঙ্কর রহস্য এবং পুরনো দেয়ালের সাথে জড়িয়ে থাকা অন্ধকার আবিষ্কার করতে।
রাতের আঁধার গভীর হতে হতে একঝাঁক বৃষ্টি নামলো। রাশেদ, সুমন, আর মিশু পথ হারিয়ে বসেছিলেন। গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে, মোবাইলে কোনো সিগন্যাল নেই। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো সাহায্যের আশাও নেই। হঠাৎ দূরে, অন্ধকারের মধ্যেই যেন ক্ষীণ আলোর একটা ঝলক দেখতে পেল তারা। সেদিকেই হাঁটা শুরু করে দিল তিন বন্ধু।
আলোটা আসছিল একটা প্রাচীন বাড়ি থেকে। জরাজীর্ণ দেওয়াল, ভাঙা জানলা - বাড়িটি যেন বছরের পর বছর ধরে এক নিঃসঙ্গ অভিশাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে। তবুও, অন্য কোন উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই তারা ঠিক করলো রাতটা সেখানেই কাটিয়ে দেবে।
বাড়ির ভেতরের অবস্থাও বাইরের চেয়ে ভালো নয়। গোটা বাড়ি জুড়ে ধুলো আর মাকড়সার জাল। আসবাবপত্র যেন শতাব্দী ধরে কেউ ছোঁয়নি। একটা জীর্ণ সোফায় বসে তারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। কিন্তু আরামটা বেশি স্থায়ী হলো না।
প্রথমে আবছা একটা ফিসফিস শুনতে পেল তারা – যেন দেওয়ালের ওপার থেকে কেউ কথা বলছে। তারপর, সিঁড়ির ওপরে কার যেন পায়ের আওয়াজ। চোখের কোণে একটা ছায়া যেন দ্রুত সরে গেল ঘরের এক কোণ থেকে অন্য কোণে। রাশেদ সাহস করে উঠে দাঁড়ালো।
"কেউ আছে এখানে?"
কোনো উত্তর নেই, শুধু একটা হিমশীতল নিস্তব্ধতা।
রাত যত এগোতে লাগলো, অদ্ভুত ঘটনাও বাড়তে থাকলো। একটি পুরনো ছবির ফ্রেম থেকে চোখ যেন কারো ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রান্নাঘর থেকে খালি পাত্র পড়ার শব্দ। বন্ধ ঘড়ির কাঁটা হঠাৎ নড়াচড়া শুরু করা। আর সেই ফিসফিস.... ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করল, যেন ঘরের কোণে কোণে ছড়িয়ে পড়ছে।
ভোরের আলো ফোটার আগে সুমন আর মিশু পালাবার সিদ্ধান্ত নিল। রাশেদকে জাগাতে গিয়ে তারা আঁতকে উঠলো। রাশেদের চোখ ছিল কপালে উঠে যাওয়া, মুখে একটা অদ্ভুত হাসি। সে আস্তে আস্তে ফিসফিস করে উঠলো, "এই বাড়ি আমাদের ছেড়ে যেতে দেবে না... কখনোই না..."
দুই বন্ধু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সেই ভয়ঙ্কর বাড়ি ছেড়ে প্রাণপণে ছুটে পালালো। পেছনে ফেলে রইল রাশেদের আর্ত চিৎকার আর ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে ভেসে আসা সেই ফিসফিস - যেন বাড়িটিই যেন শেষ কথাটা বলছে।