পুতুল - ভয়ের এক রাত
ঠাণ্ডা বাতাসে কান্নার একটা অশরীরী সুর ভাসছিল। বৃষ্টি থামলেও আকাশটা কালো মেঘলা। গ্রামটা যেন কালো চাদরে ঢেকে গেছে। একা পুরোনো বাড়িটাতে বসে আছি। খড়ের চালের উপরে বাতাস নাচতেছে, শব্দটা শিউরে উঠার মতো। হঠাৎ, ঘরের এক কোণা থেকে ঠান্ডা একটা হাওয়া এসে আমার গায়ে লাগলো। চমকে উঠে চারপাশে তাকালাম, কিন্তু আর কেউ ছিল না। আবার সেই কান্না, এবার আরো কাছ থেকে।
ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। হাত বাড়িয়ে দেয়ালের কাছে গেলাম। ম্যাচ জ্বালানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু হাত দুটো কাপছিল। অনেক কষ্টে একটা ম্যাচ জ্বালানো গেল। মিটমিটে আলোয় ঘরটা আরো ভয়ঙ্কর লাগতে লাগলো। হঠাৎ, আলোর ঝলকানিতে দেখি দরজার ফাঁক দিয়ে একটা সাদা শাড়ি পরা মুরব্বি ঢুকছে। চিৎকার করতে গেলাম কিন্তু গলা বের হলো না।
মুরব্বিটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। পিছিয়ে দিলাম, যতক্ষণ না পিছনে দেয়ালে ঠেকে গেলাম। মুরব্বিটা আমার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো। তাঁর চেহারা দেখা গেল না কিন্তু চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছিল। তাঁর মুখ থেকে শোনা গেল, "আমার খেলনা ফিরাইয়া দেও"।
কাঁপতে কাঁপতে বললাম, "আমি… আমি কোনো খেলনা দেখি নি।"
মুরব্বিটা আরো কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, "তুমি জানো। আমার পুতুল।"
হঠাৎ মনে পড়লো, বিকেলে বাড়ির আঙ্গিনায় খেলার সময় একটা পুরোনো পুতুল দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম কেউ খেলতে ভুলে গেছে, তাই ঘরে নিয়ে এসেছিলাম।
কাঁপতে কাঁপতে কাপড়ের ব্যাগটা খুঁড়লাম এবং পুতুলটা বের করে মুরব্বির দিকে বাড়িয়ে দিলাম। পুতুলটা নিয়ে মুরব্বি মুচকি হাসলো, তাঁর চোখের জ্বলজ্বলে ভাবটা কমে গেল। সে ধীরে ধীরে ঘরের দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেল।
পরে, সকালে গ্রামের লোকজন এসে জানতে পারলো রাতে কী হয়েছিল। তারা জানালো, এই বাড়িতে অনেক বছর আগে একজন মা ছেলের মৃত্যুর পর আত্মহत्या করেছিলেন। তাঁর ছেলের পছন্দের খেলনা ছিল সেই পুতুলটি।
আমি আর কখনো সেই বাড়িতে থাকিনি। কিন্তু রাতের সেই অশরীরী কান্না এবং সাদা শাড়ি পরা মুরব্বির চেহারা আমার মনে গেথে গেছে।